দেশে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ চাল আমদানির সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী পরশু (১৫ এপ্রিল)।
কিন্তু ২ আগে এরই মধ্যে আমদানি করা চালের কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ২ থেকে ৩ টাকা করে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখের সরকারি ছুটি দিনেও সোমবার বন্দরে ভারত থেকে চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তবে আজ (রবিবার) বিকাল ৫টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এ বিষয়ে অনুমতি মেলেনি।
আরও পড়ুন: ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় বেশ কিছুদিন ধরে ভারত থেকে বেশি পরিমাণে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর আগে সরকার দুই দফায় আমদানির সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি মাসের ১৫ তারিখ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। মেয়াদ বাড়ানো হলেও আমদানিকারকরা তাদের বরাদ্দকৃত চাল সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এলসি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে আমদানি করতে পারেননি। তাই তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো গেলে বরাদ্দকৃত চালের চালান দেশে পুরোপুরি আমদানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও জানান, বেশ কিছুদিন থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি অব্যাহত রাখা হলেও দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের হিলি ট্রাক পার্কিংয়ে ৬ শতাধিক আমদানিকৃত চালবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
আজ (রবিবার) হিলি স্থলবন্দরের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে ভারত থেকে যেখানে ৪০-৫০টি ভারতীয় চালবোঝাই ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশ করত, সেখানে ঈদের ছুটির পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০টি ট্রাক দেশে ঢুকছে।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের দেশের কৃষকের উৎপাদিত বোরো চাল বাজারে আসতে এখনো অন্তত মাসের অধিক সময় লাগবে। এদিকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চাল আমদানির সময়সীমা রয়েছে। আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; অনেক চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, স্বর্ণা ৫ জাতের চালের দাম ছিল ৫২ টাকা, এখন সেই চাল ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সম্পা কাটারি জাতের চাল বিক্রি হচ্ছিল ৬৭ টাকায়, এখন কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
এই আমদানিকারকের দাবি, বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়তে পারে। ভারতের হিলিতে পাইপলাইনে ৬ শতাধিক চালবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরকারের উচিত হবে সেগুলো দেশে প্রবেশে আমদানির মেয়াদ আরও অন্তত ১৫ দিন বাড়ানো।
হিলি বন্দরে নওগাঁ থেকে চাল কিনতে আসা পাইকার তোতা কুমার দাস বলেন, ‘২/৩ দিন আগে ৬৭ টাকা কেজি দরে ১২০ টন সম্পা কাটারি জাতের চাল কিনেছি। অথচ গত শনিবার তা ৬৯ টাকা দরে কিনতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে দাম বাড়েনি, কিন্ত দেশে কেন দাম বেড়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।’
হিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন কুমার পাল জানান, ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা ৫ জাতের চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা, সম্পা কাটারি জাতের চাল ৩ টাকা বেড়ে ৭১ টাকা, মিনিকেট ৫ টাকা বেড়ে ৭৪ টাকা, গুটি জাতের চাল ৪ টাকা বেড়ে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আটদিন পর আমদানি-রপ্তানি শুরু হিলি স্থলবন্দরে
হিলি স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মো. শফিউল বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে নন-বাসমতি দুই ধরনের চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। গত ১১ নভেম্বর থেকে এই শনিবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত ৪ হাজার ৯২৬টি ভারতীয় ট্রাকে মোট ২ লাখ ৮ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং ৯৪৮টি ট্রাকে ৪০ হাজার টন নন-বাসমতি আতপ চাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাল (সোমবার) পয়লা বৈশাখের দিন সরকারি ছুটি। এদিনও ভারত থেকে চাল আমদানি করার জন্য বন্দরে আমদানিসহ কার্যক্রম চালু রাখতে আজ দুপুরে বন্দরের কাস্টমস সহকারী কমিশনারের সঙ্গে বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠক করেছেন।’